কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী, জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমদ গিলমানের সমর্থনে কাদিপুরের ঢুলিপাড়া বাজারে এক বিশাল নির্বাচনী জনসভা বুধবার রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাদিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চোরামণি দেবনাথের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামছুল ইসলাম ছমছু’র পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মিছবাহুর রহমান বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হলো ইউপি নির্বাচন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে হবে ভালো প্রকৃতির ও সৎ মানুষকে। কোন খারাপ ব্যক্তি, ইয়াবখোর, লুটেরাজকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করলে ইউনিয়নের মানুষ কখনো শান্তিতে থাকতে পারবে না। অসৎ লোক দিয়ে ইউনিয়নের উন্নয়ন কখনো সম্ভব হবেনা। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী, শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী জাফর আহমদ গিলমানকে এবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে ইউনিয়নের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। ইউনিয়নের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। গত ৫ বছরে কাদিপুর ইউনিয়নে ধানের ছড়া থেকে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। তাঁর সময়কালে ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দলীয় অসহায় নেতাকর্মী কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায়নি। তারা সবসময় উপেক্ষিত ছিল। যে ব্যক্তি সরকারি সকল ভাতা থেকে টাকা নেন, তিনি কিভাবে জনগণের সেবক হবেন বলে এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট দাবি করছেন। এ ধরণের ব্যক্তিকে পরিহার করতে হবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে মিছবাহুর রহমান আরো বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বিশে^র দরবারে বাংলাদেশকে একটি রুল মডেলে রুপান্তরিত করেছেন। দেশকে আজ তলাবিহীন ঝুঁড়ি কেউ বলতে পারবেনা। বিশে^র অনেক দেশ আজ বাংলাদেশকে অনুসরণ করে। শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার কারণে দেশ আজ উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছে। জাফর আহমদ গিলমানকে নৌকা মার্কায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত করলে আগামী ৫বছরে কাদিপুরের কোন কাঁচা রাস্তা থাকবেনা। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে ইউনিয়নের সকল কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ করা হবে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ভোট। শান্তিপূর্ণ ভোট হলে নৌকার বিজয়কে কেউ ঠেকাতে পারবেনা। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ২৮ নভেম্বর নৌকাকে বিজয়ী করার আহবান জানান তিনি।
প্রধান বক্তা ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেণু। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কাদিপুরে বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাধ্যমে। এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের কোন ব্যক্তি চেয়ারম্যান না থাকায় গত ৫ বছর কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। এবার যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নৌকার প্রার্থী জাফর আহমদ গিলমানকে নৌকা মার্কায় বিজয়ী করতে হবে। তিনি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালামের কর্মকান্ডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় হলো ইউনিয়নের মানুষের জন্য একটি চেহারা। সেই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় গত ৫ পাঁচ বছর ধরে একটি নোংরা পরিবেশে কার্যক্রম চলছে। ইউনিয়নের ভেতরে কেউ প্রবেশ করলে দুর্গন্ধে সাধারণ লোকদের অনেক বেগ পেতে হয়। ইউনিয়নে বসার সুন্দর কোন স্থান নেই। তিনি আরো বলেন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সফি আহমদ সলমান যখন কাদিপুরে সাড়ে ১৮ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন তখন ইউনিয়নের অনেক দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে এবং ইউনিয়নের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করেছিল। গত পাঁচ বছরে এই ইউনিয়নের কোন উন্নয়ন হয়নি। গত পাঁচ বছরে এলজিএসপি, টিআর, কাবিখাসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকার বরাদ্ধ দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান সেই টাকার পুরো উন্নয়ন কাজ করেননি। অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাই ইউনিয়নের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে হলে এবং উন্নয়নের স্বার্থে জাফর আহমদ গিলমানকে আগামী ২৮ নভেম্বর নৌকা মার্কায় বিজয়ী করতে সকল নেতাকর্মী ও ইউনিয়নবাসীর কাছে বিশেষভাবে আহবান জানান। যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে ইউনিয়নের মধ্যে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে তাদের আগামী ২৮ নভেম্বর ভোটের মাধ্যমে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে হবে। এবং প্রমাণ করতে হবে কাদিপুর ইউনিয়ন কুলাউড়ার সবক’টি ইউনিয়নের মধ্যে একটি মর্যাদাশীল ইউনিয়ন। এছাড়া তিনি ২৩ নভেম্বর রাতে কাদিপুরে উপজেলা চেয়ারম্যানের পুত্র নাবিলসহ ৩টি ছেলেকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২৩ নভেম্বর রাতে আমার কনিষ্ঠ পুত্র নাবিলসহ আরো তিন ছেলেকে কাদিপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালাম, তাঁর ভাই মিজানুর রহমান আলমের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর আহত করে।
এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেরা খবই শান্তিপ্রিয় স্বভাবের। তাঁরা সবাই দেশে পড়াশুনা করে এখন যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত রয়েছে। তাঁরা কখনো এলাকার কারো সাথে খারাপ আচরণ করেনি। দেশে এসেছে তাদের চাচার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য। আমার ছোট ছেলে নাবিল যার শরীরে কোনদিন একটি আচড়ও লাগতে দেইনি। অথচ ক্ষমতায় বসার জন্য প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ছালামের নেতৃত্বে তাঁর ভাইসহ সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ছেলের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এরকম অমানবিক হামলায় শুধু আমার ছেলে রক্তাক্ত হয়নি, আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কাদিপুরবাসির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই এ হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। আমি আমার কাদিপুরবাসীর কাছে এই ঘটনার বিচার দিলাম। এলাকাবাসী এরকম বর্বোরোচিত হামলার বিচার করবেন। আমরা শান্তির পক্ষে চিরকাল ছিলাম আগামীতেও থাকবো।
তিনি আরো বলেন, কাদিপুর ইউনিয়নে আমি সাড়ে আটারো বছর চেয়ারম্যান ছিলাম, এর আগে আমার মরহুম বড় ভাই মোছাদ্দিক আহমদ নোমান এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন নৌকার প্রার্থী হয়েছে আমার ছোট ভাই জাফর আহমদ গিলমান। আমার গোটা পরিবার আজীবন এই ইউনিয়নের মানুষের সেবার করেছেন আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে ২৮ নভেম্বর নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানান। তিনি কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালামের গত ৫ বছরের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, ৫ বছরে কাদিপুরে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছেন চেয়ারম্যান ছালাম, তার সাঙ্গ পাঙ্গরা এমন কোন কুকর্ম নেই যার সাথে তারা জড়িত নহে। পুলিশের কাছে একাধিকবার ধরাও পড়েছে, করোনাকালীন সময়ে চেয়ারম্যান ও তার দোষররা চাল চুরি করে এই ইউয়িনের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে। চেয়ারম্যান ছালামের কুকর্মে মানুষ অতিষ্ট হয়ে তাকে গণধোলাই পর্যন্ত দিয়েছে। নৌকার জোয়ার দেখে এখন সে নানা প্রকার অপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি এসব কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে সবাইকে সজাগ থেকে নৌকার পক্ষে কাজ চালিয়ে যাবার অনুরোধ করেন।
নৌকার প্রার্থী জাফর আহমদ গিলমান তাঁর বক্তব্যে দলমতের উর্ধ্বে উঠে কাদিপুরের উন্নয়নের জন্য আগামী ২৮ নভেম্বর নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কাদিপুরের ইউনিয়নের হারানো গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে এলাকার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। নৌকার গণজোয়ার দেখে বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালাম ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী শান্ত কাদিপুরকে উত্তপ্ত করতে নানা ছলচাতুরী ও মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমি কাদিপুরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এই ইউনিয়নে চাউল চোর, মাদক ব্যবসায়ী এবং জুয়াখোরদের সমূলে বিনাশ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। তিনি তাঁর কর্মী সমর্থকদের শান্তিশৃংখলা বজায় রেখে নির্বাচন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনছুর আহমদ চৌধুরী, বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক ফজলু, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি বদরুল ইসলাম বদর, বর্তমান সভাপতি মোঃ আব্দুস শহীদ, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ইকবাল আহমদ শামীম, জেলা সাংবাদিক ফোরামের সহ-সভাপতি এম. মছব্বির আলী, কাদিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল মতিন, সাধারন সম্পাদক আবুল খয়ের মাস্টার, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল কাদির, সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ আলম চৌধুরী, উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি মোঃ খালেদ আহমদ, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিয়াজুল তায়েফ প্রমুখ। এসময় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও অঙ্গসহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় এলাকার প্রায় সহস্রাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।