Iklan

header ads

অবমাননা বনাম হাশরের দিন বিশ্বনবী হযরত মহাম্মদ (স:) এর অবস্থান - ওবায়দুল হক

ভারতে নবী (স:) কে অবমাননার প্রতিবাদে বিশ্ব এখন উত্তাল। যে নবী (স:) কে অবমাননা করা হচ্ছে আসুন জানি কেয়ামতের দিন নবী (স:) এর মান মর্যাদা , সম্মান এবং অবস্থান কেমন হবে।

বিচার দিবস

তার আগে দুনিয়াতে তিনি কেমন ছিলেন কয়েকটা ঘটনার পক্ষিতে বুঝার চেষ্টা করি। 

১) একদা সেজদারত অবস্থায় এক কাফির শহরের বজ্র নবী (স:) এর উপর ইচ্ছা করে ফেলে দেয়। সেজদা থেকে দাড়াতে পারছিলেন না। মা ফাতেমার দৃষ্টিগোছর হলে তিনি পিতা মুহাম্মদ (স:) কে ঠেনে তুলে আনেন। এই অবস্থায় তিনি সেই কাফেরকে বদদোয়া না করে তার হেদায়েত চেয়ে দোয়া করেছেন।

২) যুদ্ধে নবী (স:) এর দাঁত মোবারক ভেঙ্গে সারা শরীর যখন রক্তে লাল হচ্ছিল সে অবস্থায় তিনি শত্রু পক্ষের হেদায়েত চেয়ে দোয়া করেছেন।

৩) হত্যার উদ্দেশ্যে আসা যুবক হত্যা করতে না পেরে রাগে বিছানা নষ্ট করে চলে যায়। ঘটনাক্রমে ফিরে এলে তার প্রতি দেখিয়েছেন সর্বউত্তম ব্যবহার।

আরও অনেক ঘটনা আছে যা সংক্ষিপ্ত এই আরটিকোলে শেষ করা সম্ভব না। সবাই যখন সমবেত হয়ে কাফেরদের বিনাশ চেয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করার আর্জি জানাল সেসময় তিনি বলেছেন , সারা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে তাকে প্রেরণ করা হয়েছে। সুবহানআল্লাহ



এবার চলে আসি হাশরের ময়দানে নবী (স:) এর অবস্থান ও সম্মান কেমন হবে। হাশরের ময়দানে ১ টি দিন পৃথিবীর দিনের হিসেবে কমপক্ষে ৫০ হাজার বছর সমান। দীর্ঘ এই সময়ে বিচার কার্য শুরুর পূর্বে মানুষের অবস্থা এমন হবে যে, তারা শেষ পর্যন্ত বেহেস্ত বা দোযখ যাই হয় না কেন বিচার কার্য শুরুর জন্য পাগলের মত অপেক্ষা করবে। 

মানুষের ঘামে যে পানি জমবে তাতে এক সময় সাতার কাটতে হবে। মাথার উপর সূর্য সেদিন সব থেকে নিকটে এবং উত্তপ্ত অবস্থায় থাকবে। মানুষের মগজ গলে কান দিয়ে বের হবে। কিন্তু সেদিন কেউ মরবে না। 

সবাই যখন বিচার কার্য শুরু জন্য পাগলের মত কামনা করতে থাকবে তখন একদল লোক বলবে চল আমরা এমন একজনকে খুজে বের করি যিনি আল্লাহর অধিক প্রিয়। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন। সবাই ভাববে আদম (আ:) হলেন আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি। আদম (আ:) আল্লাহ প্রদত্ত অনেক জ্ঞান আর ক্ষমা লাভ করেছিলেন। তাই সবাই  আদম (আ:) এর নিকট আর্জি করবে তিনি যেন আল্লাহকে অনুরোধ করেন। বিচারকার্য যেন শুরু করে দেন। আদম (অ:) বলবেন এই কাজের জন্য তিনি যোগ্য নন।   

সবাই তখন সোলাইমান (আ:) , ইব্রাহিম (আ:) একে একে জনপ্রিয় সকল বড় বড় নবীর নিকট আর্জি নিয়ে যাবে। সবাই ফিরিয়ে দেবে। আল্লাহর সামনে দাড়ানোর সাহস কারো হবে না। তখন সবাই নবী(স:) কে আবিষ্কার করবে আরশের নিচে সেজদারত অবস্থায় ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে ক্রন্দনরত। সবাই নবী (স:) এর কাছে গিয়ে আর্জি করবে। মুহাম্মদ (স:) এর অনুরোধে সেদিন আল্লাহ বিচার শুরু করবেন। আর কারও সাহস হবে না সেদিন আল্লাহর সামনে কথা বলার। 

প্রত্যেক নবীকে আল্লাহ দুনিয়াতে একটি বিশেষ দোয়া করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এই বিশেষ দোয়ায় তারা যে দোয়া করবে আল্লাহ তাই কবুল করবেন। সকল নবীই দুনিয়াতে সেই দোয়া করেছিলেন এবং তারা বিভিন্ন অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মুহাম্মদ (স:) সেই দোয়া কিয়ামতের ময়দানে তার উম্মতের শেফায়েতের জন্য রেখে দিয়েছেন।

সেদিন মুহাম্মদ (স:) সেজদায় ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে কাঁদতে থাকবেন। আল্লাহ সেদিন ডেকে বলবেন, ইয়া মুহাম্মদ বল কি চাও। আজ তোমার দোয়া কবুল করা হবে। চাও তা পূরণ করা হবে। জানেন, কি বলবেন তিনি? তিনি শুধু বলবেন - ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি। আল্লাহ বলবেন , ঠিক আছে। যাদের ইমান আছে তাদের নিয়ে সামনে অগ্রসর হও। বিচারকার্য ইতিমধ্যে শুরু হয়ে যাবে। যাদের ইমান আছে তাদের তিনি সেদিন আলাদা করবেন। বিনা হিসেবে তারা সেদিন বেহেস্তে যাওয়ার সুযোগ পাবে। জেনে রাখা ভাল, কোন ইমানদার নেই যার বিচার পরিপূর্ণভাবে নেয়া হলে বেহেস্তে যাওয়ার সুযোগ পাবে। সেদিন তারাই বেহেস্তে যাওয়ার সুযোগ পাবে যারা আল্লাহর অনুগ্রহ পেল। আর তারাই সেই অনুগ্রহ লাভের সুযোগ পা্বে যারা দুনিয়াতে ইমান ও ইসলাম আকড়ে ধরে ছিল।

যাই হোক ইমানদারদের একত্রিত করে মুহাম্মদ (স:) আবার আরশের সামনে সেজদায় পড়ে কাদতে থাকবেন। আল্লাহ বলবেন, ইয়া মুহাম্মদ বল কি চাও। আজ তোমাকে তা দেয়া হবে। মুহাম্মদ (স:) বলবেন , ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি। আল্লাহ বলবেন, যাও আর তাদের বের করে নিয়ে আসো যাদের অন্তরে সামান্য ইমান দেখতে পাবেন। এইবার আল্লাহ বলবেন বের করে নিয়ে আসার জন্য। কারণ তারা ইতিমধ্যে দোযখে চলে গেছে। এত দীর্ঘ সেই দিন। দোযখের ফেরেস্তার কাছে আল্লাহর হুকুম নিয়ে যাবেন আর যাদের সামান্য ইমান রয়েছে তাদের বের করে নিয়ে আসবেন। জানেন তারা কারা হবে? তারা সেই সব মানুষ যারা বার বার ভুল করেছে এবং বার বার পাপ করেছে। বার বার ইমান হারিয়েছে এবং বার বার ফিরে এসেছে। যারা ইমান থাকার পরও আমল করে নি। যারা পাপ করেছে কিন্তু অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয় ছিল। তারা সামান্য ইমানের অধিকারী হবে। তাদের বের করে নিয়ে আসবেন । 

আবার পুনরায় আরশের সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়বেন। আল্লাহ বলবেন ইয়া মুহাম্মদ , মাথা উঠাও। কি চাও বল? আজ তোমার কথা শুনা হবে। মুহাম্মদ (স:) বলবেন ইয়া উম্মতি। বলবেন, আল্লাহ আমার উম্মত। তখনও তিনি নিজের জন্য কিছু চাইবেন না। যেদিন পিতা পুত্রকে চিনবে না। সেদিন মুহাম্মদ (স:)  বলবেন, আল্লাহ আমার উম্মত। আল্লাহ বলবেন, যাও যাদের অন্তরে সামান্যতম ইমান আছে তাদের বের করে নিয়ে আস? আগের বার বলা হয়েছিল সামান্য। আর এবার বলা হল সামান্যতম। এই সামান্যতম মানে কতটুকু জানেন? 

সামান্য ইমান ছিল তাদের যাদের ইমান চোখে দেখা গিয়েছিল। আর সামান্যতম ইমান হল তাদের যাদের ইমান আর চোখে দেখা সম্ভব না। দোনিয়াতে তাদের ইমান দেখতে হলে হয়ত মাইক্রোসফিক যন্ত্রের প্রয়োজন হবে। পরমানুর ভেতরে ইলেকট্রন কণা থেকে যার মধ্যে নিউট্রন থাকে। পরমানুর সেই ক্ষুদ্র কণার মত সামান্যতম ইমান যদি কারও থাকে তাদের বের করে নিয়ে আসতে বলা হবে। এরা হল সেই শ্রেণীর মানুষ যারা জীবনে কমপক্ষ্যে ১ বার মনে মনে ভেবেছে - আল্লাহ একজন হয়ত আছেন যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। 

শেষ কথা - 
যেদিন কেউ কথা বলার সুযোগ পাবে না সেদিন আল্লাহর সামনে কথা বলার যোগ্যতা থাকবে মুহাম্মদ (স:) এর। যেদিন কেউ নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না, সেদিন মুহাম্মদ (স:) এর উসিল্লায় ক্ষমা পাবেন অগণিত উম্মত।  তাকে যারা অবমাননা করার চেষ্টা করবে তারাই হাশরের ময়দানে অসম্মানিত হবে।