জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মত কোন টেলিস্কোপ কি জান্নাত জাহান্নামও দেখতে পাবে ? সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা খুজার আগে আরও একটি প্রশ্নে আলোকপাত করি। কেয়ামত হওয়ার আগে রাসূল (স:) মেরাজে জান্নাত জাহান্নাম কিভাবে দেখলেন? যদিও পৃথিবী ধ্বংস হয় নি আর কেয়ামত ও বিচার কার্যও এখনও হয় নি।
শুধু তাই নয়, নবীজী (স:) জান্নাত ও জাহান্নামের এমনভাবে বর্ণনা দেন যেন তিনি তা লাইভ দেখে দেখে বর্ণনা করছেন। উম্মতের কারা জাহান্নামে কি ধরনের শাস্তি পাচ্ছে আর উম্মতের কারা বেহেস্তের কি সুবিধা পাচ্ছেন তাও মেরাজ থেকে এসে বর্ণনা করলেন। তখনকার অধিবাসীরা মেরাজের বিবরণ শুনে হাসি তামাশা করছিল। মেরাজের ঘটনা প্রসঙ্গ তুলে এখনকার সময়ের সাইন্সের যুগে অনেকেই হাসাহাসি করেন। সবাই যেন বিশ্বাস করার আগে প্রমাণ দেখতে চান। ঠিক যেমন মক্কাবাসীর মধ্যে কাফেররা নবীজী (স:) এর কাছে এসে প্রমাণ চাইত। কিছু অলৌকিক কাজ করে দেখাতে বলত। যাদের নসিবে হেদায়েত ছিল তারা বিশ্বাস করত আর যাদের নসিবে হেদায়েত ছিল না তারা আরও বড় কাফেরে পরিণত হত।
কিছুদিন আগে এক নওমুসলিম ভাই আমাকে এই প্রশ্নটি করেন। তখন আমি যে উত্তর দিয়েছিলাম তাতে আমি নিজেও খুব সন্তুষ্ট ছিলাম না। তবে বিশ্বাসটা ছিল অনেকটা এরকম নবী (স:) যখন বলেছেন তখন তিনি অবশ্যই দেখেছেন। তিনি তো এমন এক মহামানব যার মুখ থেকে একটিও মিথ্যা বের হয় নি। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে সব কিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আল্লাহ হয়ত নবী (স:) ভবিষ্যৎ দেখিয়েছেন। ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা তো তিনিই ভাল জানেন। আমাদের জন্য যা ভবিষ্যৎ মহাবিশ্বের ঐ স্থান থেকে দেখলে হয়ত সবকিছুই চলমান কিংবা স্থীর। মানবজাতীর ভবিষ্যৎ ফেরেস্তারাও হয়ত জানেন, তাই তো মানুষ সৃষ্টির সময় আল্লাহ যখন ফেরেস্তাদের ডেকে বললেন, এখন আমি মানুষ সৃষ্টি করব। তখন ফেরেস্তারা বললেন, আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা পৃথিবীতে ফিৎনা ফেসাদ করবে? এখন কথা হচ্ছে, ফেরেস্তারা কিভাবে জানল , মানুষ ফেৎনা করবে? তারা কি মানবজাতীর ভবিষ্যৎ দেখেছে? হতে পারে দেখেছে কিংবা ফেরেস্তারা প্রজ্ঞা থেকে বলেছেন। তখন আল্লাহ বললেন , আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। এখানে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে , আল্লাহই সর্বাধিক মহাজ্ঞানী। আমাদের পক্ষে সবকিছু জানা সম্ভব না।
আমরা একটু সামনে যদি এগিয়ে যাই তবে জানতে পারি পৃথিবী সৃষ্টির পর আল্লাহ এমন এক কলম সৃষ্টি করেন যাকে নির্দেশ দিলেন লিখতে। কলম জানতে চাইল কি লিখবে? আল্লাহ বললেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এবং সেই কলমটি নিজে থেকেই লিখে নিল। আর সবকিছুই লওহে মাহফুযে সংরক্ষিত।
বিজ্ঞান যতই উন্নত হচ্ছে ততই যেন আল কোরআন ও হাদিস আরও বেশী বুঝার সুযোগ হচ্ছে। সম্প্রতি নাসার জেমস ওয়েবব টেলিস্কোপ ১৩৫০ কোটি বছর আগের পৃথিবীর ছবি আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। এই টেলিস্কোপ কি অতীতে টাইম ট্রাভেল করেছে?
আসলে আমরা যা দেখছি তা কিভাবে দেখছি এবং কোথায় থেকে দেখছি তার উপর নির্ভর করছে আমরা কতটুকু দেখছি। স্থান কাল বেধে বাস্তবতা ভিন্নতা পাচ্ছে। আমরা খালি চোখে সামান্য ছোট একটা চাদ আর সূর্যকে দেখতে পাই। দেখে মনে হয় চাদটাকে মনে হয় ব্যাগের ভেতর ভরে নিয়ে যাওয়া যাবে। আবার আমরা যে চাদকে দেখি তাও রিয়েল টাইমের চাদ না। চাদে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে ধরা দিতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে , এই সময়েও চাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। আমরা কয়েক সেকেন্ড অতীতের চাদকে দেখতে পাই।
জেমস ওয়েবব টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের যে জায়গায় অবস্থান করছে সেখান থেকে পৃথিবীর শুরুর সময়টা দেখতে পাচ্ছে। এটাই সাইন্স। এটা অবিশ্বাস করার সুযোগ নেই।
তাহলে আল্লাহ মেরাজে নবী (স:) যে স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন সেখান থেকে পৃথিবীর বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ দেখা কোন অসুবিধা হওয়ার কথা না। আর এসব কিছুই লওহে মাহফুজে আল্লাহ সংরক্ষণ করে রেখেছেন। হয়ত কোনদিন সাইন্স এমন কোন জায়গার সন্ধান পেয়ে যাবে যেখান থেকে জান্নাত জাহান্নামও দেখতে পাবে। সেদিন পৃথিবীতে কোন অবিশ্বাসী থাকার কথা না। জানি না, আল্লাহই এই বিষয়ে ভাল জানেন। তবে সেই জায়গার সন্ধান হয়ত মানুষ কোনদিনই পাবে না। কিংবা কেয়ামতের ঠিক কিছুদিন পূর্বেই হয়ত এমন জায়গার সন্ধান পেয়েও যেতে পৃথিবীবাসী। সেদিনের পর পৃথিবী সৃষ্টির স্রষ্টার উদ্দেশ্যও শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। সবাই যেদিন ঈমানদার হয়ে যাবে এবং পৃথিবীতে আর কোন অবিশ্বাসী থাকবে না সেদিনের পর পৃথিবীও শেষ হয়ে যাবে হয়তবা। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে তাই অভিনন্দন।
-----------ওবায়দুল হক
লেখক ও ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলাপার
আইটিহল, এসএম মার্কেট, রবিরবাজার।