চলছে আরবি বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ মহররম মাস। মহররম মাসেই পবিত্র আশুরা পালিত হয়। আশুরার রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত। মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) প্রতিনিধি হিসাবে সৃষ্টি, জান্নাতে অবস্থান, পৃথিবীতে প্রেরণ ও তওবা কবুল সবই আশুরার তারিখে সংঘটিত হয়।
হজরত নূহ (আ.) সাড়ে ৯০০ বছর তাওহিদের দাওয়াত দেওয়ার পরও যখন পথভ্রষ্ট জাতি আল্লাহর বিধান মানতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন তাদের প্রতি নেমে আসে আল্লাহর গজব মহাপ্লাবন। এই মহাপ্লাবনের ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পায় তারা যারা আল্লাহ ও নবির প্রতি বিশ্বাসী হয়ে হজরত নূহের (আ.) নৌকায় আরোহণ করে। ওই নৌকা ৪০ দিন পর জুদি পাহাড়ের পাদদেশে মাটি স্পর্শ করে ঐতিহাসিক আশুরার দিন।
এ দিনেই হজরত ইবরাহিমের (আ.) জন্ম, ‘খলিলুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত ও নমরুদের অগ্নি থেকে রক্ষা পান। হজরত ইদরিস (আ.) কে বিশেষ মর্যাদায় চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয় আশুরার দিনে। সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে তার পিতা হজরত ইয়াকুব (আ.) -এর সাক্ষাৎ যেদিন হয়-সে দিনটি ছিল আশুরার দিন। নবি আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ ১৮ বছর কুষ্ঠরোগ ভোগ করার পর আরোগ্য লাভ করেছিলেন আশুরার দিন। হজরত ইউনূস (আ.) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকার পর মুক্তি লাভ করেন আশুরার দিন।
ঘটনাক্রমে হজরত সোলায়মান (আ.) সাময়িক রাজত্বহারা হন। আল্লাহতায়ালা তাকে আবারও রাজত্ব ফিরিয়ে দেন আশুরার দিনে। আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে পানির মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দিয়ে পার করে দেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ সাগরে ডুবিয়ে মারেন আশুরার দিন। হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন আশুরার দিনে। এ দিনে হজরত ঈসার (আ.) জন্ম হয় এবং ইহুদিরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহতায়ালা তাকে ফেরেশতা কর্তৃক সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন এ দিনেই।
দাবি করা হয়, কাবা শরিফ প্রথম গিলাফ দ্বারা আবৃত করা হয়েছিল আশুরার দিন। এ পৃথিবীর অস্তিত্বের সঙ্গেও আশুরার দিনের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আশুরার দিনেই আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন আকাশমালা, মর্তজগৎ, পর্বতরাজি, লওহ-কলম ও ফেরেশতাদের। আশুরার দিনে আল্লাহ নিজ আরশে আজিমে অধিষ্ঠিত হন। এভাবে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ দিনের সম্পর্ক। আশুরার দিনটি যে কারণে বিশ্ব মুসলিমের কাছে অত্যন্ত স্মরণীয়, শিক্ষণীয় ও হৃদয়বিদারক তা হলো-কারবালার ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে সত্যের জন্য সংগ্রাম করে কারবালার প্রান্তরে সপরিবারে শাহাদতবরণ করে সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ রেখে গেছেন।
ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় ইসলামে ও মুসলমানদের কাছে আশুরার দিনের গুরুত্ব কতখানি। আল্লাহতায়ালা এদিনের গুরুত্ব বোঝার ও পবিত্রতা বজায় রাখার তওফিক দান করুন।