প্রথমে জেনে নেই, কেন ওয়েবসাইট তৈরি করে?
একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে আপনার যে কোন প্রতিষ্ঠানের অনলাইন পরিচয়। যে কোন কোম্পানি, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি সকল প্রতিষ্ঠান তাদের নামে ওয়েবসাইট করে থাকে যাতে করে ইন্টারনেটে তাদের সম্পর্কে জানা যায় এবং তাদের বিভিন্ন সেবা বা সার্ভিস সম্পর্কে মানুষ যেন সহজেই জানতে পারে। এই জাতীয় ওয়েবসাইট গুলো হচ্ছে মূলত প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটের বাইরেও কিন্তু রয়েছে আরও প্রচুর ওয়েবসাইট যেগুলো হচ্ছে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক। এই ধরণের ওয়েবসাইট গুলোতে সাধারণত বিভিন্ন টিপস, ট্রিক, আইডিয়া, বিনোদন, খবর ইত্যাদি বিষয় দেয়া হয়ে থাকে। এই গুলোকে আপনি অ-প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ও বলতে পারেন। এই ধরনের ওয়েবসাইট গুলো করা হয় সাধারণত সখের বসে অথবা, লং টাইম ব্যাবসা করার জন্য। শুরুতেই বলে নেই, নতুনদের মাঝে ওয়েবসাইট বা ব্লগ নিয়ে বেশ ভাল কনফিউশন দেখা যায়। আসলে ব্লগ হচ্ছে এক ধরনের ওয়েবসাইট যেখানে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে লিখালিখি করা হয়। সেটা হতে পারে যে কোন বিষয়। আর ওয়েবসাইট হচ্ছে এক ধরনের সাইট যেখানে সাধারণত তেমন কোন চেঞ্জ হয় না, বা যেখানে লিখালিখির ব্যাপার থাকে না। আপনি ওয়েবসাইট বা ব্লগ যেটাই করুন না কেন সেখান থেকে অবশ্যই আয় সম্ভব। চলুন সামনের দিকে এগুনো যাক।
আপনি কি বিষয়ে ওয়েবসাইট/ব্লগ তৈরি করবেন?
আসলে প্রথম অবস্থায় সবচাইতে বড় যে সমস্যাটি হয় সেটি হচ্ছে, কোন বিষয়ে ওয়েবসাইট বা ব্লগ করবেন সেটাই খুজে না পাওয়া? এটার মূল কারন হচ্ছে তাড়াহুড়া করা। আমরা যখন কোন উৎসাহমূলক লিখা পড়ি বা কারন সফলতার গল্প শুনি তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি আমিও তেমন হব, এর জন্য যত পরিশ্রম করতে হয় করব। হ্যা, এমন ভাবাই শ্রেয়। কিন্তু আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমরা ধৈর্য্য ধরার চেস্টা করতে পারি না, আমাদের সব কিছু ইন্সট্যান্ট বা তৎক্ষণাৎ দরকার। আর এই জন্য শেষ পর্যন্ত আমাদের তেমন কিছুই হয় না। আর তাই যেহেতু আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট একদিন বা দুইদিনের জন্য নয়, যেহেতু এটা সারা জীবনের জন্য তাই হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন না যে আপনি কোন বিষয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন। ভাবুন, দেখুন, শুনুন, বুঝুন তারপর সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি করবেন এবং কেন করবেন এবং কিভাবে করবেন?
ব্লগ বা ওয়েবসাইটের বিষয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কিছু টিপসঃ
ব্লগ বা সাইটের বিষয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নিচের টিপস গুলো আপনাকে হেল্প করতে পারে- আপনি ভাল জানেন এবং আপনার ইন্টারেস্ট আছে এমন যে কোন বিষয়েই আপনি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। আপনি যেটাই জানুন না কেন সেটা নিয়েই শুরু করে দিতে পারেন লিখালিখি। শেয়ার করুন আপনার নিজের জ্ঞান। সেটা কোন বিষয় সেটা কোন ব্যাপার না, কোয়ালিটি থাকলে সব বিষয়েই সাইট করা যায়। এমন অনেকেই আছেন যারা তাদের সখের অনেক কিছু নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করেও সেখান থেকে প্রতি মাসে কয়েক হাজার ডলার আয় করছেন। আপনি যে বিষয়টি ভালো জানেন বা পারেন সেই বিষয়টিকে ওয়েবসাইট বানানোর কাজে লাগাতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি একজন ওয়েব ডিজাইনার। তাহলে আপনি চাইলে ডিজাইন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখির অভ্যাস করতে পারেন। আপনার সাইটে প্রতিদিন, সম্ভব না হলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি করে পোস্ট দিতে পারেন। চেস্টা করুন যেটা সেটা ইন্টারেস্টিং হয় এবং মানুষ বা ভিজিটর যাতে সেটা পড়ে নতুন কিছু জানতে পারে। এই ভাবে লিখতে থাকলে দেখবেন একসময় আপনি পার্মানেন্ট ভিজিটর পেয়ে যাবে যারা আপনার সাইট নিয়মিত ভিজিট করবে। তবে এই ক্ষেত্রে, কখনো হেজিটেশনে ভুগবেন না যে কি লিখব, কেমন হবে, কেউ পছন্দ করবে কিনা? আপনি সেটাই লিখবেন যেটা আপনি জানেন। লিখতে লিখতেই এক সময় আপনি আপনার ব্লগকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারবেন। আপনি যত লিখবেন আপনার লিখা তত আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে থাকবে। একবার ব্লগ জনপ্রিয় হয়ে উঠলে সেখানে আপনি অন্যান্য লেখকদের ও আমন্ত্রণ করতে পারেন আপনার ব্লগ লিখার জন্য। এবং অন্যান্য ব্লগাররাও যদি আপনার ব্লগে লিখা শুরু করে দেয় তাহলেই তো কেল্লাফতে ! এরপর আপানাকে আর আশা করি পেছনে ফিরতে হবে না। এই ভাবে যদি একটি সাইট কে দাড় করিয়ে ফেলতে পারেন তাহলে এখানে বিজ্ঞাপন সহ উপরোল্লেখিত উপায় সমূহ অবলম্বন করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে পার্মানেন্ট আয়ের উৎস হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
আসুন আমরা জানি একটা ওয়েব সাইট থেকে আয় করতে হলে কি কি স্ট্যাপ বা ধাপ আপনাকে অনুসরণ করতে হবেঃ
১. ডোমেন নেইম (Domain Name) নেয়া?
একটি ডোমেন নেইম (Domain Name) হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের অপরিবর্তনীয় নাম। যা ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা আপনার ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে পারেন। যেমন কেউ যদি ফেইসবুক এ অ্যাক্সেস করতে চায় তখন ব্রাঊজারের অ্যাড্রেসবার –এ www.facebook.com লিখে Enter চাপলে ফেইসবুক –এর ওয়েবসাইট চলে আসে। এই www.facebook.com হল ফেইসবুক এর ডোমেন নেইম। একটি ডোমেন নেইম ইন্টারনেটে কম্পিউটারগুলি শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে, যা বেশ বড় আকারের গাণিতিক সংখ্যা যা আমাদের অর্থাৎ মানুষের জন্য মনে রাখা অত্যন্ত কঠিন। এই কারণে, ইন্টারনেটে যে কোন সংস্থা সনাক্তকরণের জন্য আইপি অ্যাড্রেস এর পরিবর্তে ডোমেন নেইম ব্যবহার করা হয়। একটি ডোমেন নেইম (Domain Name) অক্ষর এবং সংখ্যার সমন্বয় হতে পারে, এবং এটি বিভিন্ন ডোমেন নেইম এক্সটেনশানগুলির সমন্বয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন .com, .net, .gov, .org, .com.bd এবং আরও অনেক কিছু। আপনি ডোমেন নেইম ব্যবহার করার হলে প্রথমে ডোমেন নেইম রেজিস্টার করা আবশ্যক। প্রতিটি ডোমেইন নাম অনন্য। কোনও দুটি ওয়েবসাইটের একই ডোমেইন নাম থাকতে পারে না। যদি কেউ www.mydomain.com- এ টাইপ করে তবে এটি mydomain ওয়েবসাইটে যাবে এবং অন্য কোথাও যাবে না। আরেকটা কথা খেয়াল রাখবেন, আপনি যে বিষয় নিয়ে ওয়েবসাইট নিতে ইচ্ছুক নামটা যেন তাঁর রিলেটেড হয়। ধরুন আপনি ইন্টারনেট বা টেকনোলজি রিলেটেড সাইট নিবেন এই ক্ষেত্রে আপনার ডোমেন নেম'টা শুনেই যেন সবাই বুজতে পারে এটা টেকনোলজি রিলেটেড সাইট।
২. ওয়েব হোস্টিং (Web Hosting) নেয়া?
ওয়েবসাইট গুলো এমন ভাবে তৈয়ার করা যাতে পৃথিবীর যে কেউ যে কোন জায়গা থেকে দেখতে পারে। তাই ওয়েবসাইটের কনটেন্ট (গান, ছবি, আর্টিকেল, ভিডিও ইত্যাদিকে কনটেন্ট বলে) যাতে সবাই দেখতে পারে তার জন্যে কনটেন্টগুলোকে ২৪ ঘণ্টা এবং ৭ দিনই ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন জায়গায় রাখতে হবে। আর এ জায়গাটা হতে পারে কোনো কম্পিউটারের হার্ড-ড্রাইভ যার সাথে ইন্টারনেটের ২৪ ঘণ্টা সংযোগ রেয়েছে। এক কথায়, আপনার ওয়েবসাইটের যাবতীয় তথ্য এমন জায়জায় রাখবেন যাতে করে যে কেউ আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তথ্যগুলি দেখতে পারে, এটাই হচ্ছে হোস্টিং। কোথায় থেকে ডোমেন-হোস্টিং নিবেনঃ আপনার যদি অনলাইন সাপোর্ট করে এমন মাষ্টার কার্ড থাকে তাহলে HostGator, 1&1 Web Hosting, InMotion, DreamHost, Liquid, GoDaddy, Hostwinds, a2hosting, namecheap, namesilo ইত্যাদি অনেক বিদেশী ডোমেন হোস্টিং কোম্পানি আছে যারা কিনা ভালো সার্ভিস দেয়। তাদের থেকে নিতে পারেন। তাছাড়া মাষ্টার কার্ড না থাকলেও বিকাশ বা ব্যাংক ট্রান্সফার এর মাধ্যমে আপনি ইচ্ছে করলে বাংলাদেশে অনেক ডোমেন হোস্টিং প্রভাইডার কোম্পানি আছে যারা কিনা ভালো সার্ভিস দেয়, তাদের থেকেও ডোমেন হোস্টিং নিতে পারেন। তবে অচেনা কারো থেকে নেয়ার আগে তাদের রিভিউ এবং অন্যদের কাছ থেকে জেনে শুনে নেবেন। কারন, আমরা বাঙ্গালী , সো প্রতারণা আমাদের ট্যাডিশন। আমার চেনাজানা কিছু বাংলাদেশী ডোমেন-হোস্টিং প্রভাইডার আছে যারা এখন বিদেশী কোম্পানি গুলোর মতোই ভালো সার্ভিস দেয়। আমি এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে ভালো সার্ভিসই পেয়েছি। যাই হোক, আপনার সুবিধা মতো যেকোন ভালো কোম্পানি থেকে নিয়ে নিতে পারেন। তবে, আপনি যেখান থেকেই ডোমেন নেইম (Domain Name) এবং হোস্টিং (Hosting) নেন না কেন এই বিষয় গুলো যাচাই করে নিবেন। হোস্টিং এর Bandwidth, Compatibility, Reliability, Security ইত্যাদি বিষয়াদি। এখানে আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যেমন সিকিউরিটি অ্যাক্সেস, লোডিং স্পীড কেমন, ২৪ ঘণ্টা সার্ভার চালু থাকবে কিনা ইত্যাদি। এই গুলি সরাসরি ডোমেন হোস্টিং সাপোর্টে জিজ্ঞেস করে নিবেন। ডোমেন হোস্টিং এর দাম একত্রে বাৎসরিক হিসেবে ২০০০ টাকা থেকে পেতে পারেন। রেট টা মূলত নির্ভর করে Bandwidth, Compatibility , Disk Space এই গুলির উপর। এই গুলি যতো বাড়বে টাকার পরিমাণ ও বাড়বে।
৩. সি.এম.এস (CMS) ও থিম সিলেকশন: প্রচলিত কিছু জনপ্রিয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের হলো WordPress, Drupal, Joomla, ExpressionEngine, TextPattern, Radiant CMS, Cushy CMS, SilverStripe ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে সহজ ও বহুল ব্যবহৃত CMS হলো WordPress তাছাড়া এর কাজ সহজ করার জন্য অনেক প্লাগিন ব্যবহার করতে পারবেন। আর থিম এর কথা বলতে গেলে ওয়ার্ডপ্রেসের নিজস্ব ফ্রি থিম, থিম ভান্ডার রয়েছে । এখানে একটি সমস্যা হচ্ছে আপনার প্রয়োজনমত থিম খুজে পাবেন না । দেখা যাবে ডিজাইন পছন্দ হয়েছে ত আপনার প্রয়োজনীয় সব ফিচার নেই । আবার অনেক ফিচার সমৃদ্ধ কিন্তু ডিজাইন ভাল না । আর বেশিরভাগ ফ্রি থিমেই কোন সমস্যা হলে প্রয়োজনের সময় সাপোর্ট পাওয়া যায় না । তবে অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে আপনি নিশ্চিন্তে ফ্রি থিম ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন । যদিও তাদের থিম সংখ্যা কম । তবে তারা আপনার ১০০ ভাগ প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম । এবং কোন সমস্যা হলে ভাল সাপোর্টও পাবেন । তবে পেইডথিম কিনে নিলে ভালো।
৪. তারপর আসি একটি ইমপরটেন্ট ফেক্টর কিওয়ার্ড রিসার্চ ও কম্পিটিশান অ্যানালাইসিস এর কথাঃ
কিওয়ার্ড রিসার্চঃ সঠিক কিওয়ার্ড নির্বাচন এবং সার্চ ইঞ্জিনে সেটা রাঙ্কিং করা এসইও তে খুব গুরুত্বপূর্ণ । সঠিকভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারলে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন যুদ্ধে আপনি ৫০% এগিয়ে থাকলেন। কিওয়ার্ড রিসার্সে ভুল হলে প্রতিটা পদে পদে ওয়েবসাইটকে মূল্য দিতে হয় অতএব আপনার বিজনেস এর মূল চাবি হল কিওয়ার্ড রিসার্চ। অনলাইনে কিওয়ার্ড রিসার্সের জন্য অনেক টুলস পাবেন, একটু Google এ সার্চ দেন দেখবেন অনেক ভালোভালো টুলস পেয়ে যাবেন। যেমন,গুগল অ্যাডওয়ার্ডস গুগল এর একটি ফ্রি টুলস। এর মাধ্যমে আপনি গুগল এর পেইড ক্যাম্পেইন সেটআপ এবং সব ধরনের কি-ওয়ার্ড এর লং টেইল কি-ওয়ার্ড এর সাজেশন, সার্চ ভলিউম, বিজ্ঞাপনের কম্পিটিশন এর হার, একটি নির্দিষ্ট সাইটের ক্ষেত্রে কোন কিওয়ার্ডটি বেশি জনপ্রিয় তা খুব সহজে বের করতে পারবেন এবং ইন্টারনেটে কোন কিওয়ার্ডগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যাবহৃত হচ্ছে বা সার্চ করা হচ্ছে। এরপর প্রয়োজনমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। [Note: গুগল অ্যাডওয়ার্ডস মাত্র ১ টি টুলস আপনি যদি ভালো কি কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে চান তবে আরো অনেক ভালোভালো টুলস আছে ঐ গুলি দিয়েও আপনাকে কিওয়ার্ড খুঁজতে হবে।]
কম্পিটিশান অ্যানালাইসিসঃ প্রথমেই বলে রাখা ভাল, কিওয়ার্ড কম্পিটিশান অ্যানালাইসিস একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনেকে আবার বলবেন, বিভিন্ন টুলস দিয়ে তো কিওয়ার্ড পেয়েই গেছি তাছাড়া এদের সার্চ ভলিউম, বিজ্ঞাপনের কম্পিটিশন এর হার এই গুলিও জানি, তো আমাকে আবার কম্পিটিশান অ্যানালাইসিস করতে হবে কেন? আপনাদের কে একটা আমার নিজস্ব ব্যাপার দিয়ে উদাহরণ দেই। ধরেন, আমি কুমিল্লাতে থাকি, কেউ একজন আমাকে বুদ্ধি দিলো যে কুমিল্লা শহরে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস করে তাই তুমি যদি এখানে একটা রেস্টুরেন্ট দাও তাহলে খুব ভালো চলবে। এখন আমি যখন কম্পিটিশান অ্যানালাইসিস করতে গেলাম তখন দেখলাম কুমিল্লাতে যেমন ১০ লাখ মানুষ বাস করে তেমনি এখানে ১ হাজারের উপরে ভালো রেস্টুরেন্ট বা হোটেল অলরেডি আছে। এখন আমার কাছে ২ টি অপশন। হয় আমাকে রেস্টুরেন্ট দেয়ার কথা বাদ দিতে হবে নতুবা যদি দিতেই হয় তবে যারা যারা রেস্টুরেন্ট বা হোটেল দিয়ে খুব ভালো পজিশনে আছে তাদের সাথে টক্কর দিতে হবে। তারা কি কি আইটেমর খাবার বানায়, তাদের গ্রাহক কারা বেশী, তাদের দুর্বলতা কোথায় বা তাদের অনেক আইটেম খাবারের মধ্যে কোন খাবার টা একটু মানের দিক থেকে অনুন্নত তা বাছাই করতে হবে। আশা করি আমার এই উদাহরনের পরে কম্পিটিশান অ্যানালাইসিস নিয়ে আর কারো দ্বিমত থাকবেনা। পুরো অ্যানালাইসিস প্রক্রিয়াটি জানতে হলে আপনাকে এসইও-র প্রায় প্রতিটা ফেক্টরের কোর লেভেল (সর্বোচ্চ পর্যায়) পর্যন্ত জানতে হবে। যেমন- পেজ রেংক কি? কিভাবে নির্ধারন হয়? ডোমিন এইজ (Age) কি? EMD কি? ডোমিন অথরিটি কি? পেজ অথরিটির কি? টাইটেল ও ডেস্ক্রিপশন ট্যাগ কি? এই ট্যাগ কিভাবে এসইও তে প্রভাব ফেলে? ব্যাক লিংক কি? ব্যাক লিং কিভাবে পাওয়া যায়? Do-follow, No-follow ব্যাংক লিংঙ্ক কি? ইন্টারনাল লিংক, এক্সস্টার্নাল লিংঙ্ক কি? কিভাবে কাজ করে? এলেক্সা রেংক কি? এলেক্সা রেংক কি? এলেক্সা রেংক কিভাবে কাজ করে? কিওয়ার্ড র্যাং ক ডিফিকাল্টি ইত্যাদি বিষয়ে ভালো ধারণা থাকা চাই।
৫. এবার আসি সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন এর কথাঃ
এসইও আসলে কত প্রকার? আমার এই পোস্ট পড়ার পর অনেকে হয়তো বলবেন, এতো দিন কি তাহলে ভুল জানতাম? তবে যারা জানেন তাদের জন্য গুড লাক। একটি সাইট কিভাবে র্যাংক এ আনা যায়, প্রায় ৯৫% এসইও এক্সপার্টরা বলে থাকেন ওয়েব সাইট র্যাংকে আনতে ২ প্রকার এসইও করা লাগে। অন পেইজ অপটিমাইজেশন এবং অফ-পেজ অপটিমাইজেশন। আসলে তাদের কথাটা সামান্য একটু ভুলের মধ্যে আছে।
এসইও আসলে দুই প্রকারঃ a. পেইড সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন
b. অর্গানিক সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন
আর আমাদের জানা সেই অন পেইজ অপটিমাইজেশন এবং অফ-পেজ অপটিমাইজেশন হলো অর্গানিক সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন করার ২ টি পদ্ধতি বা টাইপ।
a. পেইড সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন: গুগলে সার্চ দিলে মাঝে মাঝে দেখবেন সার্চ রেজাল্টের ডানে বা উপরে ভিন্ন রং (সাধারনত হালকা খয়েরি) কিছু লিংক থাকে (যে শব্দ দিয়ে সার্চ দিয়েছেন সেটা সংশ্লিষ্ট)।এগুলি পেইড লিংক অর্থ্যাৎ এর জন্য গুগলকে অর্থ দিতে হয়েছে।এই ধরনের অপটিমাইজেশনকে পেইড এসইও (Paid SEO) বলে।
b. অর্গানিক সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন: যে লিংকগুলি সার্চ রেজাল্ট পেজে সাধারনভাবে প্রদর্শিত হয় মানে গুগল এগুলি কোন বিশেষ রং দিয়ে হাইলাইট করেনা এগুলি অর্গানিক লিংক।এই ধরনের অপটিমাইজেশনকে অর্গানিক এসইও (Organic SEO) বলে। এটাকে এলগরিদমিক SEO ও বলে। (বিঃদ্রঃ আমরা শুধু অর্গানিক সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন (Organic SEO) শিখবো , পেইড সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন (Paid SEO) নয়।)
অরগানিক এসইও : * অন-পেজ অপটিমাইজেশনঃ অন-পেজ অপটিমাইজেশন এ যে কাজ গুলো করা লাগে তারমধ্যে মেটা ট্যাগের ব্যবহার (Meta Tag), টাইটেল ট্যাগের ব্যবহার করা (Title Tag), কি-ওয়ার্ড ট্যাগ ব্যবহার (Key-word Tag), ডেসক্রিপশন ট্যাগের ব্যবহার (Description Tag), অলটার ট্যাগের ব্যবহার (ALT Tag), পেজ এবং পেজে বিদ্যমান ফাইলের নাম করণ, কনটেন্ট এর মাঝে কি-ওয়ার্ড এর ব্যবহার করা, এক্সএমএল সাইট ম্যাপ তৈরি করা ( XML Sitemap, তাছাড়া বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে সাইট সাবমিট করা ইত্যাদি কাজ করা। প্রতিনিয়ত এগুলোর উন্নতি সাধনে চেস্টা করে যান তবে সফল ভাবে আপনি নিজেও পারবেন ওয়েবসাইটের অন-পেজ অপটিমাইজেশন সফল করে তুলতে ।
2. *অফ-পেজ অপটিমাইজেশন বা লিংক বিল্ডিং: অনেকে লিংক বিল্ডিংটাকে অফ পেইজের একটা কাজ মনে করে । আসলে অফপেইজের জন্য আপনি যাই করবেন সবই লিংক বিল্ডিং এর অন্তর্ভুক্ত। অফপেইজ এসইও কে একটি বিল্ডিং এর পিলার এর সাথে তুলনা করা জেতে পারে । একটি বিল্ডিং এর খুটি যত মজবুত বিল্ডিংটি তত মজবুত ও দীর্ঘ স্থায়ী হয় । তেমনি অফপেইজ এসইও কে একটি সাইটের খুটি বলা যেতে পারে । সাইটের এসইও মজবুদ করতে হলে অফপেইজ এসইও খুব ভালো ভাবে সম্পাদন করতে হবে ।
অফ-পেইজ অপটিমাইজেশনের ক্ষেত্রে প্রধান আলোচ্য বিষয় সমূহঃ
a. সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম: বর্তমান সময়ের জন্য সামাজিক মাধ্যম এর চাইতে বড় এবং শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম আর কোথাও নেই । সামাজিক মাধ্যমের মাঝে লিংকড ইন, টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব, রেডিট, পিন্টারেস্ট এগুলো অন্যতম এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত ।
b. ব্যাক লিংক তৈরিঃ আফপেইজ এসইও অনেক বিশাল বিষয়, আপনাকে অনেক সময় নিয়ে এখানে কাজ করতে হবে। অফপেইজ এসইওতে আপনাকে যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে সেগুলো হচ্ছে –
Social Bookmarking
Blogging
Forum Marketing
Search Engine Submission
Directory Submission
Local Listings
Article Submission
Answer Questions
Web 2.0
Video Marketing
Business Reviews
Guest Posting etc..
অবশ্য অনপেইজ এসইও ও খুব গুরুত্ব সহকারে সম্পন্ন করতে হবে । নাহলে জিনসটা ভিতরে খারাপ রড দিয়ে বাহিরে খুব জাকজমক করে আস্তর করার মতন হয়ে যাবে । এখন বলতে পারেন ভাই আপনার কথা মতো ডোমেন- হোস্টিং নিলাম ! সাইট এর অন-পেইজ অপটিমাইজেশন, অফ-পেইজ অপটিমাইজেশন করলাম সাইট এর ভিজিটর ভালো এখন আয় করবো কিভাবে। আয়ের কথাটা আসলে আমি সবার শেষে বললাম , কারন আগে ওয়েব সাইটটার ব্যাপারে পুরোপুরি ধারণা নেন ; তারপর আয় নিয়ে ভাবেন।
৬. চলুন দেখি ওয়েব সাইট থেকে কিভাবে আয় করা সম্ভবঃ
ক. বিজ্ঞাপন থেকে আয়ঃ আপনার ওয়েবসাইটে যদি বেশ ভাল ট্রাফিক (ট্রাফিক হচ্ছে ভিজিটর বা মানুষ যারা আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে) থাকে তাহলে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অন্যান্য কোম্পানীর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করিয়ে সেখান থেকে আয় করতে পারেন। যেমন- আমরা প্রায় সময়ই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকলে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পন্যের বিজ্ঞাপন দেখে থাকি। এই জাতীয় বিজ্ঞাপন গুলো ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করানোর মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইটে যে কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাবেন সেই কোম্পানী আপনাকে একটি নির্দিষ্ট মূল্য পে করবে তাদের বিজ্ঞাপন আপনার ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করানোর জন্য।
তাহলে এবার বলতে পারেন, এই সকল কোম্পানির বিজ্ঞাপন পাব কোথায়? এই ধরনের বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য অনলাইনে অনেক জনপ্রিয় সাইট আছে (যেমন- গুগল অ্যাডসেন্স)। তাছাড়া আরো অনেক বিজ্ঞাপন এর সাইট আছে এই সকল সাইট থেকে কিভাবে অ্যাড নিবেন এবং কিভাবে আয় হবে সেটা নিয়ে ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে বিস্তারিত আলচনা করা হবে। এখন শুধুওয়েবসাইট থেকে আয় করার কিছু প্রসেস সম্পর্কে জানি।
খ. নিজের কোন পন্য বিক্রি করে আয়ঃ আপনার ওয়েবসাইট যদি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রতিদিন বেশ ভাল ট্রাফিক থাকে তাহলে আপনি আপনার নিজের তৈরি করা কোন পন্যের বিজ্ঞাপন সেখানে দিতে পারেন এবং সেখান থেকে আপনি আপনার পন্যের জন্য বেশ ভাল সেল পেতে পারেন। তবে এটা শুধুমাত্র, যদি আপনার তৈরি করা কোন প্রোডাক্ট থাকে তাহলেই সম্ভব। আপনার যদি বিক্রি করার মত কোন পণ্য না থাকে তাহলে এই ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
গ. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়ঃ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অনেকটা সেলসম্যান এর মত। এখানে, আপনাকে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য বিক্রি করে দিতে হবে এবং প্রতিবার যখন আপনি অন্য কোম্পানির কোন পণ্য আপনার নিজের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন তখন আপনাকে সেই বিক্রয়কৃত অর্থ থেকে কমিশন দেয়া হবে। আপনি চাইলে আপনার ওয়েবসাইটে এই জাতীয় মার্কেটিং করতে পারেন। নিজের সাইট বা ব্লগ করে আমাদের দেশে অনেকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করছেন। কাজেই আপনিও এই জাতীয় কাজ করে আয় করতে পারেন।
ঘ. ইমেইল কালেকশনঃ আমরা সবাই মোটামুটি কম বেশি নেট থেকে বই, গান, ভিডিও ইত্যাদি ডাউনলোড করে থাকি। তবে, মাঝে মাঝে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে বই বা মুভি ডাউনলোড করতে গেলে আমরা দেখে থাকি আমাদের ইমেইল অ্যাড্রেস দিতে বলে। আমরা ইমেইল অ্যাড্রেস দিলে তারপর আমাদেরকে সেটা ডাউনলোড করতে দেয়। কিন্তু কেন এমনটা হয়, কেন ইমেইল এর ঠিকানা চায় ওই ডাউনলোড সাইট গুলো? এটা হচ্ছে এই জন্য যে, আপনি গান ডাউনলোড করার সময় আপনার যে ইমেইল এড্রেসটি দিবেন সেটি ওই ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ সংরক্ষন করে রাখবে। এই ভাবে যতজন ওই গানটি ডাউনলোড করতে তত জনের ইমেইল অ্যাড্রেস তার কাছে থাকবে। এই ভাবে ধরলাম, ১০০০ জনের ইমেইল ওই ওয়েবসাইটের মালিকের কাছে জমা হল। এবার তিনি ওই ১০০০ ইমেইল অ্যাড্রেস বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটারদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। কারন, অধিকাংশ ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য অ্যাক্টিভ ইমেইল অ্যাড্রেস এর তালিকা প্রয়োজন পরে। এই জন্য বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটাররা ইমেইল অ্যাড্রেস কিনে নেয় নিজেদের মার্কেটিং করার জন্য। আর আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে এবং আপনি এইভাবে ইমেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করতে পারেন, তাহলে আপনিও এই ইমেইল অ্যাড্রেস গুলো বিক্রি করে আয় করতে পারেন।
কিন্তু সব কথার বড় কথা হল, ওয়েবসাইটে যদি ট্রাফিক বা ভিজিটর না থাকে তাহলে কোন লাভই নেই। কারন, যে সাইটের ভিজিটর নেই সেই সাইটে কেউই টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিবে না। আর তাই যে কোন ওয়েবসাইট আপনার আয়ের উৎস তখনই হবে যখন আপনার সাইটটি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ লোক আপনার সাইট ভিজিট করবে। কিন্তু এই পর্যায়ে একটি ওয়েবসাইটকে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিশ্রম আর ধৈর্য্য।