Iklan

header ads

আধুনিক দ্বাসত্ত্ব থেকে মুক্ত থাকতে কন্যার প্রতি এক পিতার কিছু উপদেশ

কন্যা

প্রিয় কন্যা, এই যে তুমি রোদ ধরার চেষ্টা করছো কিন্তু রোদ হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তেমনি তুমি বড় হয়ে দেখবে কিছু সম্পর্ক তুমি ধরে রাখতে চাইছো কিন্তু তা দূরে সরে যাচ্ছে। একটা কারণ হতে পারে, এটাই নিয়তি। অন্য কারণ হতে পারে, এটা আমাদের ভুল চেষ্টা। রোদ ধরতে হয় না, তুমি যখন রোদে হাত রাখবে তখন তা এমনীতেই তোমার শরীরের  মধ্যে শক্তি রুপে ঢুকে যাবে। তাই যেটা যে প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয়েছে সেটা সেরুপেই গ্রহণ করতে হবে। 

প্নিয় কন্যা, তুমি যদি নরদামার কিটকে আলোতে নিয়ে আসতে চাও তবে সেটা মরে যাবে। আলো তার সহ্য হবে না। তুমি আবার যদি পত্যক্ষ করো তবে দেখবে, গাছে জন্ম নেয়া কীট ধীরে ধীরে তার খোলস পরিবর্তন করে প্রজাতি হয়ে উড়ছে। তুমি বিমোহিত হবে যত বেশি তুমি প্রকৃতি থেকে বুঝতে শিখবে। তাই সব সময় প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেবে। 

প্রিয় কন্যা, তোমার জন্য কিছু উপদেশ রয়েছে, সেটা গ্রহণ করলে তুমি সফল হবে। তার আগে তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। তুমি যখন তোমার মাযের গর্ভে তখন অনেক রাত তোমার মায়ের পেটেের উপর আমার দুচোখের অশ্রু ঝরেছে। আমি শুধু স্রষ্টাকে বলেছি, তোমার রুহের জগতে সবচেয়ে ইলমসম্পন্ন ও নেক্কার রুহ দুনিয়ার জমিনে আসার অপেক্ষায় সেই নেক্কার রুহকে আমার সন্তান রুপে দান কর। তাই তোমার নাম রেখেছি ইলমা। আর কিয়ামতের মাঠে আমি খোদার আরশের নিচে তোমায় দেখতে চাই। তাই তোমার নাম দিয়েছি আরশিয়া হক ইলমা।

প্রিয় কন্যা, সব চেয়ে বড় সম্পদ কি জানো? কি বস্তু এই জগতে যা হিরার চেয়েও হাজারগুন মূল্যবান? তুমি কি জান, কি অর্জন করলে তুমি সফল হবে? হ্যা, সেটা ইলম। 

প্রিয় কন্যা, এক তাহাজ্জুদের সময়ের ঘটনা তোমাকে বলি, মনটা আমার খুব অস্তির। তাহাজ্জুদ পড়ে তোমার উপর মাথা রেখে আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে তোমার জন্য দোয়া করছি।  তুমি মায়ের পেটের মধ্যেই নড়ে উঠলে। যেন মনে হল, তুমি বলছো বাবা আমি সুস্থ আছি। মনটা শান্ত হল। শয়তান কত কত খারাপ চিন্তা মাথার মধ্যে ঢেলে দেয় তা তুমি বড় হলে আর বিশেষ করে মা হওয়ার সময় অনুভব করবে। এই কথাগুলো এই জন্যই বলছি যে তুমি যেন বড় হয়ে বুঝতে পারো, বাবা যেখানেই থাকি না কেন, বাবার ভালোবাসা আর দোয়া তোমাকে সব সময় ঘিরে আছে। রোদ যেমন হাত পেতে দিয়ে সেটা শরীরে ধারন করতে হয়, তেমনী আমার এই ভালোবাসা হৃদয় উন্মুক্ত করে দিয়ে গ্রহণ করতে পারবে।

মনে রাখবে, আমি শুধু তোমাকে আদর করব না। তোমাকে আমি শাসনও করব। যেন তুমি উত্তমরুপে গড়ে উঠতে পারো। কিন্তু সব কিছুর পরেও নির্ভর করছে স্রষ্টার রহমত। তুমি যদি হেদায়তে প্রাপ্তদের দলভূক্ত হতে পারো তবে আমার উপদেশগুলো গ্রহন করে তুমি সুখী হবে। আর আমি তোমাকে সেই কথাগুলোই বলব , যা আমি আমার জীবন থেকে শিখেছি। তাই মনোযোগ দিয়ে শোন - - - 

১। প্রিয় কন্যা, কারও দান গ্রহণ করবে না। তোমার যা আছে তাই দিয়ে চলবে। তোমার যদি একটুকরো রুটি থাকে তবেও তুমি আল্লাহর উপর সবর্দা ভরসা রাখবে। রিজেকের ভয় যেন কখনো তোমার মনকে অশান্ত করে তুলতে না পারে। খুব খিদে পেলে সুবহানাল্লাহ পড়বে। ভরপেট খাবার তোমাকে শান্তি দিতে পারবে না। একটুকরো রুটি খেয়ে যদি সুবহানাল্লাহ বলতে পারো তবে আরও অধীক তৃপ্তি পাবে।

এমন কোন দান বা গিফট গ্রহণ করবে না যা তুমি সব সময় ব্যবহার করার যোগ্যতা রাখো না। এমন গাড়ি কেউ যদি তোমাকে দেয় যা হারিয়ে গেলে তুমি আরেকটি কিনতে পারবে না তবে সে গাড়ি তুমি গিফট হিসেবে গ্রহণ করবে না।

এমন পোশাক তুমি পড়বে না যা তোমাকে প্রডাক্টরুপে উপস্থাপন করে। সব সময় সিম্পল ও সাদাসিদে জীবন যাপন করবে যদিও স্রষ্টা তোমাকে কোটি টাকার সম্পদের মালিক বানিয়ে দেন। এমন পোষাক পড়বে না যা পড়ে ঘরের বাইরে বের হলে কোন গরীবের আফসুস হয় তোমার সুন্দর জামা দেখে। তাই সাধারণের মত সাধারনের সাথে মিশে থাকবে।

২।  প্রিয় কন্যা,  ব্রান্ড পত্যাহার করে চলবে। দামি ব্রান্ডের কাপড় , সাবান, লোশন, পারফিউম এগুলো ব্যবহার করা কবিরা গোনাহ। এমন সব ব্যবসায়ীদের প্রডাক্ট ব্যবহার করবে যারা তাদের সম্পদের যাকাত দেয়। অথবা এমন গরীবের প্রডাক্ট কিনবে যা বিক্রয় করে সে তার দৈনন্দিন খাবারের ব্যবস্থা করে। তুমি যে ব্রান্ডের প্রডাক্ট ব্যবহার কর সেই ব্যবসায়ীদের টাকা দিয়ে অস্র ব্যবসা হচ্ছে কি না, অসামাজিক ব্যবসা হচ্ছে কি না, ইসলাম বিরোধী কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা তোমার জানা উচিত। মনে রাখবে , তুমি যে যুগে জন্ম নিয়েছো সে যুগে ‍‍‍"জানি না" বলে কিছু নেই। একটু রিসার্চ করলেই সব জানা যায়। তাই ব্রান্ডের প্রডাক্ট ব্যবহার করে তুমি অপচয় করছো পাশাপাশি দ্বীনের বিরোদ্ধে একটি গোস্টিকে তুমি উত্তানে সাহায্য করছ। ব্রান্ড পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দিলাম তোমার জন্য। 

৩।  প্রিয় কন্যা,  পূন্যবান হবে। সুখী হতে হলে নেকীর কাজ করতে হবে। একমাত্র আমলই মানুষকে সুখী করে। প্রতিদিন স্রষ্টার কাছে ক্ষমা চাইবে আর যতটুকু সম্ভব নেক আমল করবে। 

৪।  প্রিয় কন্যা,  সবাইকে সাহায্য করতে যেও না। সবাইকে সাহায্য করতে যেনও না। এতে তারা তোমার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। যেখানে একান্তই তোমার সাহায্য দরকার কেবল সেখানেই সাহায্য করবে। তুমি ছাড়া কেউ যদি কোন সমস্যা থেকে উঠে যাওয়ার সুযোগ থাকে তবে তাকে সে পথ দেখিয়ে দিবে। যা করতে পারবে না তা সরাসরি পারব না বলে দিবে। যতটুকু সম্ভব ঠিক ততটুকুই দিতে চেষ্টা করবে।

৫।  প্রিয় কন্যা, অন্তরে আল্লাহকে রাখবে।  সব সময় অন্তরে আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করবে। তাহলে তুমি শিরক ও পাপ থেকে বেচে যাবে। যখন তোমার পাশে কেউ নেই তখনও তিনি তোমার অন্তরে। ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলবে। 

৬।  প্রিয় কন্যা,  হালাল উপার্জন করবে। পরিস্তিতি যাই হোক না কেন, উপার্জন হালাল হতে হবে। যে উপার্জন হালাল কি না সন্দেহ আছে সে উপার্জন ত্যাগ করবে। হালাল উপার্জন থেকে ইয়াতিমদের সাহায্য করবে।

৭।  প্রিয় কন্যা,  দ্বাসত্ত্ব থেকে মুক্ত থাকবে। যা করবে শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে করবে। কোন মানুষ / সমাজের জন্য নয়। কাউকে খুশি করার জন্য নয়। তাহলে তুমি দ্বাসত্ত্ব থেকে মুুক্ত থাকতে পারবে।

৮।  প্রিয় কন্যা, কখনো রেগে যেও না। রাগ ধ্বংসের কারণ। কঠিন কোন কাজ করতে হলে কিংবা সীদ্ধান্ত নিতে হলে সেটাও ঠান্ডা মাথায় করবে। রাগ পুরোপুরি হারাম।

৯।  প্রিয় কন্যা, শরীরকে সুস্থ রাখবে, নিজেকে ভালোবাসবে। তুমি যে শরীরটা পেয়েছে সেটাও আমানত যেমন আমানত তুমি আমার কাছে। শরীর সুন্থ না থাকলে ইবাদত করতে আনন্দ পাবে না।

১০।  প্রিয় কন্যা, তোমাকে জ্ঞানী হতে হবে। জ্ঞান অর্জন ফরয। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিখতে থাকতে হবে। আলসেমী করা যাবে না। যারা জানে তারাই উত্তম। তারাই শক্তিশালী। 

১১।  প্রিয় কন্যা, কখনো  ভেঙ্গে পড় না। আমরা সবাই খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাই। এই সময় বিচলীত হয়ে যেও না। স্থির থাক। মনে রাখবে কঠিন সময় যখন চলে যায় তখন সেটা খুবই তুচ্ছ হয়ে পড়ে। জগতের কোন কিছুই যেন স্রষ্টার চেয়ে প্রিয় না হয়। 

১২।  প্রিয় কন্যা, মিথ্যা বর্জন করতে হবে।  মজা করেও মিথ্যা বলবে না। সব সময় সৎ থাকবে। এখানে মনে রাখতে হবে, আগে সৎ হতে হবে পরে মিথ্যা বর্জন করতে হবে। তুমি যদি কোন অন্যায় কর আর মনে করে তুমি সত্যবাদি হয়ে সেটা বলে দিবে তবে তুমি ভুল করবে। সত্যাবাদীতা তোমার কোন অন্যায় কাজ থেকে তোমাকে রক্ষা করবে না। আগে সৎ হবে পরে মিথ্যা ত্যাগ করবে। 

১৩। প্রিয় কন্যা, নিজের স্বামীকে পরামর্শক হিসেবে মনে করবে। কখনো মনে করবে না যে, তুমি তার পরামর্শে চললে তুমি ছোট হয়ে যাবে। আল্লাহ নিয়ামত স্বরুপ নারীদের জীবনে পরামর্শক রেখেছেন। সব সময় স্বামীর সাথে পরামর্শ করে চলবে। একমাত্র শিরক ছাড়া অন্য কোন কাজে তুমি তার সঙ্গ ত্যাগ করবে না। তোমার স্বামীর বিশ্বস্থ হবে। কখনো যেন বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তোমার উপর না উঠে। 

১৪। প্রিয় কন্যা, তুমিই তোমার। জগতের কেউ তোমার চেয়ে বেশী তোমার ভাল বুঝবে না। আর যদি সেরকম কাউকে  পেয়ে যাও তবে তুমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবে। যা অর্জন করবে তা অন্যের জন্য তোমার নিজের জন্য জ্ঞান সংরক্ষণ করবে। সব সময় নিজেকে সকল ঝামেলা থেকে দূরে রাখবে। শান্তিপূন সমাধান নিয়ে চিন্তা করবে।

১৫। প্রিয় কন্যা, আবেগকে প্রশ্রয় দিবে না। আবেগের বশে কোন কাজ করবে না। কাউকে একটা উপদেশও দিবে না। যা করবে নিজের প্রজ্ঞা থেকে করবে। নারীদের আবেগ একটু বেশী হয়। আবেগ কিছুটা থাকা ভাল। তবে অতি আবেগ তোমাকে ক্ষতির মধ্যে ফেলবে।

১৬। প্রিয় কন্যা, কোন কিছু হারানোর ভয় করবে না।  এমন কোন সম্পদ অর্জন করবে না যা হারিয়ে গেলে কষ্ট পাবে। কোন কিছু হারিয়ে গেলে মনে রাখবে , তুমি কোন কিছু নিয়ে আসো নি। হারানোর ভয় যদি পেতেই হয় তবে শুধু মাত্র ঈমান হারানোর ভয় যেন তোমার মধ্যে থাকে।

১৭। প্রিয় কন্যা, নিজেকে উৎসর্গ করতে শিখতে হবে।  দ্বীনের কাজে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করতে শিখতে হবে। তাহলে দেখবে কোন অপশক্তিই তোমাকে ক্ষতি করতে পারবে না। যে স্রষ্টার তাকে রক্ষার দ্বায়িত্ত্বও স্রষ্টার। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা নাস/ফালাক পড়বে। আর মনে মনে ভাববে, তোমার যে সকল শত্রু তোমার ক্ষতি চায় আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন অথবা ধ্বংস করুন।

১৮। প্রিয় কন্যা, সময়ের গুরুত্ত্ব দিবে। যে সময়টা চলে যাচ্ছে সেটা আর ফিরবে না। আর এই সময়ের হিসাব তোমাকে দিতে হবে। নিজেকে উত্তম কাজে নিয়োজিত রাখবে। কোন কাজ না থাকলে মনে মনে আল্লাহ নামের জিকির করবে।  

 

 সব সময় আল্লাহ তোমাকে হেফাজতে রাখুন।