Iklan

header ads

সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জে ছাতক পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার, হবিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি ৩০ ও নেত্রকোনায় উব্দাখালী নদীর পানি ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা এবং লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। কুড়িগ্রামে চলছে নদী ভাঙন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা এসব খবর পাঠিয়েছেন।

সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে


সুনামগঞ্জ : জেলায় সুরমা নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ও দিরাই পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই তিন পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ২৪, ৫১ ও ২১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌরসভার সুলতানপুর আবাসিক এলাকার নিম্নাঞ্চলে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। সেখানকার অন্তত ২০টি পরিবার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। তাহিরপুর, মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা এবং নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আরও অন্তত দুই দিন জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


সিলেট : জেলায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে দু-একদিনের মধ্যে এসব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। রবিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩০৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮৬.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আগামী তিন দিন সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, সিলেটের নদ-নদীর বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিলেটে গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এ ছাড়া ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় সীমান্ত এলাকার নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে বড় ধরনের বন্যার সম্ভাবনা কম। গতকাল পানি বৃদ্ধি পেয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কের বিভিন্ন অংশ তলিয়ে গেছে। পানি আরেকটু বৃদ্ধি পেলে উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে হাওর এলাকার অনেক বাড়িঘরে পানি উঠছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ : জেলায় আবারও বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই ফুঁসে উঠছে পানি, বাড়ছে গতিবেগ। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ৮.৫৫, মার্কুলি পয়েন্টে ৮.০৪ ও আজমিরীগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেমি ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১.২০, শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে ১২.৭৫, মাছুলিয়া পয়েন্টে ৯.০৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহমুদ জানান, নদ-নদীর পানি বাড়লেও হবিগঞ্জে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা নেই। বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।


নেত্রকোনা : জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহানের দেওয়া তথ্যমতে, কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি গতকাল বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঢলের পানি অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত বাড়ছে নদীর পানি। নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।


লালমনিরহাট : জেলায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নিম্নাঞ্চলে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, সকালে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখসুন্দর, সিঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, তিস্তার পানি বাড়তে পারে। তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে পারে।


কুড়িগ্রাম : জেলায় সব নদ-নদীর পানি আবারও বাড়ছে। তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে ও দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে পানি বেড়েছে। গতকাল বিকালে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৩ সে.মি ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৯৭ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। তিস্তা নদী ভাঙনে উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, বুড়াবুড়ি, হাতিয়া ও থেতরাইসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ও রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা, তৈয়বখাঁসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রায় ২৬টি পয়েন্টে নদী ভাঙন চলছে।